বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যের অসঙ্গতি সম্পর্কিত দীর্ঘদিনের উদ্বেগ মোকাবিলায় সমন্বিত 'পরিসংখ্যান নীতি' প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিবিএস বিভ্রান্তিকর অর্থনৈতিক তথ্য সরবরাহ করেছিল বলে ব্যাপক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিবিএস বারবার জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়েছে বলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে দেশের সরকারি পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে জনমনে গুরুতর সন্দেহ তৈরি করেছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'আমরা একটি পরিসংখ্যান নীতিমালা প্রণয়নের জন্য কাজ করছি, যা শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পাবে।’
আরও পড়ুন: আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমেছে ১.১৭ শতাংশ: বিবিএস
জাতীয় তথ্যের নির্ভুলতা ও অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট, ঐক্যবদ্ধ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন তিনি।
বিবিএসের তদন্ত চলমান
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত বিবিএস নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করতে না পারায় ধারাবাহিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। তাদের সক্ষমতা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো শক্তিশালী নয় বলেও মনে করেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন।
তিনি উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনসহ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের সময় বিবিএসের প্রতিবেদনকে প্রভাবিত করেছে রাজনৈতিক চাপ।
সক্ষমতার অভাবে সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন ও বিবিএসের সূত্র। জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো মূল অর্থনৈতিক সূচকগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আরও একটি উল্লেখযোগ্য বাধা ছিল।
এসব চ্যালেঞ্জ স্বীকার করে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বিবিএসের স্বাধীনতা বজায় রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন,‘আমি এরই মধ্যে তাদের জানিয়েছি, কোনো ত্রুটি থাকলেও আমি তাদের রিপোর্টে হস্তক্ষেপ করব না। ঊর্ধ্বগামী বা নিম্নগামী যাই হোক, অবশ্যই বাস্তব পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করেই মূল্যায়ন করতে হবে।’
বিবিএসের সক্ষমতা জোরদার করা
অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবিএসের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিরপেক্ষ ও সঠিক তথ্য সরবরাহে এর সক্ষমতা বাড়াতে চান তিনি। পরিকল্পনা কমিশন ও বিবিএসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যুরোর কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে ইঙ্গিত দেন এই উপদেষ্টা।
জনসংখ্যা, কৃষি, শিল্প ও বৃহত্তর অর্থনীতির সমালোচনামূলক তথ্য তৈরি এবং প্রকাশের জন্য দায়বদ্ধ বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় হলো বিবিএস। তবে আগের প্রশাসনের অধীনে একটি সমন্বিত নীতি কাঠামো ছাড়াই এর কার্যক্রমগুলো প্রায়শই আদেশ এবং বিজ্ঞপ্তি দ্বারা পরিচালিত হতো।
ভবিষ্যৎ সংস্কার
২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি 'পরিসংখ্যান আইন' পাসের মাধ্যমে বিবিএস আইনি ভিত্তি লাভ করে। এই আইনে ব্যুরোকে সঠিক ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান তৈরি, জাতীয় আদমশুমারি পরিচালনা এবং নীতিনির্ধারক, গবেষক ও অন্যান্য অংশীজনদের চাহিদা পূরণ করে এমন তথ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নীতিটির লক্ষ্য এই কার্যক্রমগুলোর আধুনিকীকরণ এবং বিদ্যমান ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলোর সমাধান করা। ব্যুরোর ভবিষ্যতের কাজগুলোর মধ্যে থাকবে পরিসংখ্যান উন্নয়নের জন্য জাতীয় কৌশল যুগোপযোগী করা, পরিসংখ্যান কর্মসূচিগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার বাস্তবায়ন করা।
পরিসংখ্যান নীতির বাস্তবায়ন বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থার পরিপূর্ণতা জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্তগুলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নেওয়া যাবে।